“Give me a good mother, I will give you a good nation.” “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি ভালো জাতি উপহার দেব”। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের এই বিখ্যাত উক্তিকে মননে ধারণ করে ফেনী জেলার সর্ব দক্ষিণে আমার নিজ উপজেলা সোনাগাজীতে একটি মহিলা কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি ২০০৩ সালে। আমরা জানি, শিক্ষা শুধু জীবন প্রস্তুতির উপায় নয়, জীবন যাপনের প্রণালীও বটে। আধুনিক শিক্ষা দর্শনে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিসত্ত্বা বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবোধ জাগ্রত করা এবং তাকে আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তোলাই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য।
এই কলেজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, সুপরিকল্পিত পাঠ্যক্রম, সহ-পাঠ্যক্রম কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক গুণাবলীর সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন যাতে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে উপযুক্ত নেতৃত্ব দিতে পারে। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অভিজ্ঞ ও দক্ষ অধ্যক্ষ, প্রশিক্ষিত ও নিবেদিত প্রাণ প্রভাষক বৃন্দ। কোলাহলমুক্ত, মনোরম ও শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশ, অত্যাধুনিক স্মার্ট ক্লাস রুম।। এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে আধুনিক তথ্য ও বইসমৃদ্ধ লাইব্রেরি; যেখানে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের প্রচুর বই রয়েছে ।প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিমুক্ত এবং প্রকৃতিগতভাবে সাবলীল একটি প্রতিষ্ঠান। সোনাগাজীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র এই মহিলা বিদ্যাপীঠটি সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পৌঁছে যাবে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে এবং একটি শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল নারী সমাজ গঠনেও এই প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে–এমনটি প্রত্যাশা করা বাহুল্য হবে না নিশ্চয়ই।
শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে জ্ঞান, দক্ষতা, মান, বিশ্বাস ও উন্নত অভ্যাস রপ্ত করা যায়। এই শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক অনুমোদন বা স্বীকৃতি পায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই, যা ব্যক্তির জীবনে শিখন-শেখানো কার্যাবলীর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে স্বতন্ত্র ভূমিকা রাখে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সংবিধানের ১৭ ও ২৬ নং অনুচ্ছেদ বলে শিক্ষা অর্জনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ বিষয়ে Benjamen Franklin এর এক চমৎকার উক্তি রয়েছে “Genius Without education is like silver in the mine”. এ বাক্যটি আমাদের শিক্ষা অর্জনের অনস্বীকার্য গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়। অর্থাৎ সুস্থ জ্ঞান ও প্রতিভাকে যথাযথ শিক্ষা অর্জন ব্যতীত বিকশিত করা সম্ভব নয়।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর এবং আধুনিক বিজ্ঞান মনষ্ক জাতি গঠনের জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের তৈরী করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের মেধা, মননশীলতা, সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব ও দক্ষতার ভিত্তিতে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের অঙ্গীকার। এ লক্ষ্য কে সামনে রেখে ফেনী জেলার উপকূলীয় এলাকার সাগরস্নাত সোনাগাজী উপজেলার কৃতী সন্তান আলহাজ্ব মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ মহোদয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠার অগ্রগামী হিসেবে গড়ে তোলেন এনায়েত উল্লাহ মহিলা কলেজ। এ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলে প্রতিষ্ঠানটি আজ জেলার একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি জ্ঞান ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে প্রত্যেকে নিবেদিত হবে এবং বহুমুখী কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করবে। তারা বিজ্ঞান মনষ্কতা, মুক্তচিন্তা, ন্যায়বোধ, মানবিকতা, উদারতা, সহিষ্ণুতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় উজ্জীবিত হবে।
আমি সকলকে বিনয়ের সাথে আহবান জানাই, এ অর্জনকে ধরে রাখার জন্য এবং আরও উত্তোরত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবাই সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করবেন। ধন্যবাদ।
ফেনী জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কি.মি দক্ষিণে সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত এনায়েত উল্লাহ মহিলা কলেজটি আলোকিত মানুষ গড়া, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্য বিবাহ রোধ এবং নারীর উপর সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধ তথা নারীর মানবিক উন্নয়নের এক মহান ব্রত নিয়ে ২০০৩ সালে এলাকার প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব শিল্পপতি, দানবীর, সমাজ সেবক জনাব আলহাজ্ব মো: এনায়েত উল্লাহ মহোদয়ের একক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা করেন স্বনামধন্য এ কলেজটি। প্রায় ৪ লক্ষ জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত সাগরস্নাত সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন পৌর সভার ৫ নং ওয়ার্ডে প্রায় ৮১ শতাংশ ভূমির উপর এ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত। অদ্যাবধি সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় অত্র কলেজটি সুষ্ঠ ও সুশৃংঙ্খল ভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং অত্র প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অত:পর কলেজটি ২২/১১/২০১০ সালে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড থেকে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে কলেজটি একটি এম.পি.ও. ভুক্ত কলেজ। এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু আছে এবং বিজ্ঞান শাখা চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সহ শিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অন্তঃ ও বহি: ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ, কলেজ ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অংশগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে কলেজটি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রায় ৬ শত শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটিতে গভনিং বডির ১ম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সোনাগাজী, ফেনী।
তারপর থেকে বর্তমান সময় অবধি গর্ভনিং বডির সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আলহাজ্ব মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ। স্বনামধণ্য এই প্রতিষ্ঠানটিতে সূচনা লগ্নে অধ্যক্ষ হিসেবে ০২/০৭/২০০৪ খ্রি. থেকে ০১/০৯/২০০৭ খ্রি. পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন জনাব আবদুল হক। এরপর ০১/০৯/২০০৭ খ্রি. থেকে ০৪/০১/২০০৮ খ্রি. পর্যন্ত অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান: ০৪/০১/২০০৮ খ্রি. থেকে ১৮/০২/২০১৯ খ্রি. পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর নিতাই চরন ভৌমিক দায়িত্ব পালন করেন, ১৮/০৩/২০১৯ খ্রি. থেকে ২৮/০২/২০২১ খ্রি. পর্যন্ত জনাব মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন চৌধুরী অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে ২৮/০২/২০২১ খ্রি. থেকে ১৫/০৯/২০২১ খ্রি. দায়িত্ব পালন করেন জনাব জোবেদা নাহার, প্রভাষক; ব্যবস্থাপনা। এরপর ১৫/০৯/২০২১ খ্রি. থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর মোঃ রুহুল আমিন ।
এ কলেজ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সুপরিকল্পিত পাঠ্যক্রম, সহ-পাঠ্যক্রম কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক গুণাবলীর সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন যাতে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে এবং ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে উপযুক্ত নেতৃত্ব দিতে পারে।